গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের পাল্টাপাল্টি দোষারোপের মধ্যে রেজা কিবরিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সেখানে বলা হয়: ১৯ জুন সাংগঠনিক আলোচনা ছাড়া গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে দলীয় আলোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
রেজা কিবরিয়ার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করবেন ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ রাশেদ খাঁন।
এর আগে সোমবার রাতে কাছাকাছি সময়ে ফেসবুকে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন রেজা কিবরিয়া এবং নুরুল হক নুর।
রেজা কিবরিয়া তার ফেসবুক পেজে লেখেন: ১৮ জুন রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় গুলশান-২ এর ৫৫ রোডস্থ ২০ নম্বর বাড়িতে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার আহ্বানে তার সভাপতিত্বে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সদস্য সচিব ভিপি নুরুল হক নুরসহ গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে। সভায় দলীয় শৃঙ্খলা আনার ক্ষেত্রে সদস্য সচিবকে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের কারণ ব্যাখ্যা চেয়ে আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার মতামত দিলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি উদ্ভব হয়।
তিনি সেখানে দাবি করেন: বয়োজ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ এমন পরিস্থিতিতে চরম অস্বস্তিতে পড়েন। এমতাবস্থায় সভার সভাপতি সভা স্থগিত করে সভাস্থল ত্যাগ করেন।
সভা চলাকালীন প্রবাসী অধিকার পরিষদ এর কমিটি পুনর্গঠন, ইতোমধ্যে সংগৃহীত অর্থের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এবং সুষ্ঠ হিসাব ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা, দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে হুমকি এমন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও ইসরায়েলের বিতর্কিত মোসাদ সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গোপন বৈঠক, দলীয় নেতৃবৃন্দদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে অসত্য সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সদস্য সচিব ভিপি নুরুল হক নুরকে দায়ী করা হয়।
রেজা কিবরিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, দল পরিচালনার ক্ষেত্রে একক কর্তৃত্বের পরিবর্তে যৌথ নেতৃত্বের বিকাশে দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক উচ্চতর পরিষদ ও নির্বাহী পরিষদ গঠনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
অপরদিকে রেজা কিবরিয়ার বক্তব্য অসত্য ও মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন দলটির সদস্য সচিব নুরুল হক নুর।
নুরুল হক নুর বলেন, সরকার বিরোধী প্রোগ্রামের নামে রেজা কিবরিয়া ব্যাংকক, কাঠমুন্ডুতে একাধিকবার মিটিংয়ে অংশ নেন এবং দেশে এসে মনোনয়ন বিক্রির চেষ্টা করেন। এছাড়া বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে বৈঠক ও ইনসাফ কায়েম কমিটির প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার বিষয়ে রেজা কিবরিয়ার বাসায় রোববার জরুরি মিটিংয়ে বসেছিলেন দলটির নেতারা।
মিটিংয়ে এসব বিষয়ে জবাবদিহিতা চাইলে রেজা কিবরিয়া সদুত্তর দিতে পারেননি বলে দাবি নুরের। তিনি বলেন, নেতৃবৃন্দের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বাসার ছাদের মিটিং স্থান ত্যাগ করে বাসায় ঢোকেন এবং পরে আর মিটিংয়ে আসেননি রেজা কিবরিয়া। ফলে মিটিং অসমাপ্ত থাকে।
ফেসবুক পোস্টে নুর জানান, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় জনৈক মাসুদ করিম-এনায়েত করিমের সাথে মিলে বিএনপি ভাঙা ও উকিল আব্দুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিতে রেজা কিবরিয়া কাজ করছেন।
নুর দাবি করেন: গণঅধিকার পরিষদের মতো একটা সম্ভাবনাময় দলের আহ্বায়ক হয়েও তিনি (রেজা কিবরিয়া) দলের মিটিং-মিছিল, কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না। বরং টাকার লোভে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদে পড়ে তিনি বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর। আমরা সেটাতে সমর্থন না দেয়ায় আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে গণঅধিকার পরিষদে ভাঙন ও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।