ভ্যাপসা গরম অনেকেরই মাথাব্যথার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়ির বাইরে সূর্যের তাপের সংস্পর্শে এ সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে। তবে মাথাব্যথার সমস্যা সবচেয়ে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায় যখন তা হয়ে ওঠে মাইগ্রেনের সমস্যা।
মাইগ্রেন হলো এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। এ ব্যথা মাথার যেকোনো একপাশ থেকে শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে এবং তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণা শুরু হয়। কোনো রোগীর ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের ব্যথা মাথার দুপাশেও হতে পারে। এ ধরনের মাথাব্যথায় মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়।
মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে মাথা দপদপ অনুভূত হওয়ার পাশাপাশি চোখের চারপাশেও ব্যথা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও নিউরোলজিস্ট ডা. মো. ইব্রাহিম খলিল সময় সংবাদকে জানান, বংশগত বা হরমোনাল, কিংবা পারিবারিক কারণে কোনো ব্যক্তি মাইগ্রেনে আক্রান্ত হতে পারেন।
এসব কারণ ছাড়াও পারিপার্শ্বিক অনেক কারণ রয়েছে, যা মাইগ্রেনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো হলো ঠিকমতো ঘুম ও খাওয়া-দাওয়া না করা, অতিরিক্ত টেনশন বা ইমোশনাল ডিস্টার্বনেস, অস্থিরতা ইত্যাদি। নারীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের আগে ও পরে মাইগ্রেনের সমস্যা বেশি বেড়ে যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ সমস্যাটি কখনো পুরোপুরি সেরে ওঠে আবার কখনো সারে না। তবে যেসব মাইগ্রেনের সমস্যা কখনো পুরোপুরি সেরে উঠবে না, সে ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের মাথাব্যথাকে অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব।
মাইগ্রেনের মাথাব্যথা সাধারণত মাঝে মাঝে হয়ে থাকে। মাথায় প্রচণ্ড ব্যথার পাশাপাশি এ সময় রোগীর বমিভাব থাকবে। কখনো কখনো বমিও করে ফেলতে পারেন রোগী। এ ছাড়া রোগী এ সময় চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন। অন্ধকারে রোগী অনেকটা স্বস্তিবোধ করেন।
দ্রুত মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে অনেকে চা, ম্যানথল নিয়ে থাকেন। অনেকে প্যারাসিটামল খেয়ে ব্যথা কমান। এ সময় পর্যাপ্ত ঘুমালেও মাইগ্রেনের ব্যথা অনেকটা কমে আসে। তরল পানীয় বেশি বেশি গ্রহণ, চোখে-মুখে-কপালে পানির ঝাপটা দিলেও ঝটপট ভালো ফল পাওয়া যায়।
তবে প্রায়ই যদি আপনি মাইগ্রেনের ব্যথায় ভোগেন তবে দ্রুত এর সমাধান না খুঁজে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ না করার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন ডা. মো. ইব্রাহিম খলিল।
সাধারণত পুরুষের তুলনায় নারীরা মাইগ্রেনের সমস্যায় বেশি ভোগেন। মাইগ্রেনের সমস্যায় একজন চিকিৎসককে বেশি খেয়াল রাখতে হয় গর্ভবতী নারী, বয়স্ক আর কোমলমতি শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ, এমন অবস্থায় চাইলেই চিকিৎসক রোগীকে যেকোনো ওষুধ দিতে পারেন না।
মাথাব্যথা নিয়ে অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণাও দেখা যায়। কেউ কেউ মনে করেন, এমন মাথাব্যথার কারণ জিন বা ভূতের আসর হতে পারে। রোগ সারাতে অনেকে কবিরাজের কাছ থেকে ভুল চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, যা কখনোই কাম্য নয়। বরং এসব ভুল চিকিৎসায় না গিয়ে একজন দক্ষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োগের মাধ্যমেই মাইগ্রেনের মাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।