হাদিসে পাকে রোজাদারের জন্য বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার ও প্রতিদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রোজা রাখার সে প্রতিদান বা পুরস্কারগুলো কী?
রোজা কেয়ামতের দিনের সুপারিশকারী
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রোজা ও কোরআন কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে আল্লাহ! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে পূর্ণ বিরত রেখেছি। কাজেই তাকে ক্ষমা করে দিন এবং পুরস্কৃত করুন। আর তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ আর কোরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। কাজেই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ অতঃপর তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৬৫৮৯)।
রোজা জাহান্নামের আগুনের ঢালস্বরূপ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণের জন্য একটি ঢাল এবং দুর্গ।’ (মুসনাদে আহমদ : ৮৯৭২)।
রাইয়ান নামক তোরণ রোজাদারের জন্য নির্ধারিত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি শাহী তোরণ আছে, যা দিয়ে একমাত্র রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সে তোরণ দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (আর যে ব্যক্তি সে রাইয়ান গেট দিয়ে প্রবেশ করবে, সে আর কখনও পিপাসিত হবে না)। (বুখারি ১/২৫৪)।
রোজাদারের বিগত জীবনের গুনাহ মাফ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাসসহ সওয়বের নিয়তে রমজানের রোজা রাখে, আল্লাহ তার বিগত জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারি ১৯০১)
রোজাদারের দোয়া কবুল হয়
তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তাআলা ফেরত দেন না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-
১. ‘রোজাদার ব্যক্তির দোয়া; যে ইফতারের সময় দোয়া করে,
২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং
৩. মজলুমের দোয়া। এ তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহতায়ালা মেঘমালার ওপর তুলে নেন। এর জন্য আসমানের দরোজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার ইজ্জত ও মহাসম্মানের কসম! বিলম্বে হলেও আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব।’ (ইবনে হিব্বান ৩৪২৮)
রোজাদারের দুটি আনন্দ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজাদার ব্যক্তির আনন্দ উপভোগের দুটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে- একটি ইফতারের সময়, অপরটি স্বীয় রবের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (বুখারি ১৯০৪, মুসলিম ১১৫১/১৬৪)
রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ মিশকের চেয়েও সুঘ্রাণ
রোজার কারণে মুখে যে দুর্গন্ধ হয়, আল্লাহ তাআলা তারও মূল্যায়ন করেছেন কল্পনাতীতভাবে। অনাহারের কারণে সৃষ্ট দুর্গন্ধ তাঁর কাছে মিশকের চেয়েও অধিক সুঘ্রাণ বলে জানিয়েছেন। আর ধন্য করেছেন তাঁর প্রেমে মত্ত রোজাদারদের। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের (পানাহার বর্জনজনিত) গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধি অপেক্ষা উত্তম।’ (বুখারি ১৯০৪)
উল্লেখ্য, বর্ণিত হাদিসে দুর্গন্ধ দ্বারা ওই গন্ধকেই বোঝানো হয়েছে, যা পানাহার বর্জনের কারণে পেটের ভেতর থেকে উত্থিত হয়। দাঁত ও মুখ অপরিষ্কার রাখার কারণে যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়, তা এখানে উদ্দেশ্য নয়। তাই রোজাদার ব্যক্তি অবশ্যই তার দাঁত ও মুখ পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকবে।