জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে শক্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে। এ আন্দোলনের ফিনিশার বা স্ট্রাইকার হচ্ছেন খালেদা জিয়া, তাঁর অবর্তমানে তারেক রহমান। যখন সরকার পড়তে বাধ্য হবে, তখনই এ আন্দোলনের সমাপ্তি হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম: এই আন্দোলনের শেষ তো হচ্ছে এই সরকারের পতন। কারণ, আমরা যে আন্দোলনটা শুরু করছি, তা জনগণের মৌলিক দাবিগুলো নিয়ে। তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য—যা ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অথচ সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধি পায়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে আয়, যে অর্থ উপার্জন, যে বিত্তসম্পদ গড়ে উঠেছে, সেটা ভয়াবহ রকমের বেশি। সে বৈষম্যটা এত বেশি যে সমাজের ওখানেই কিন্তু মারাত্মক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। এটা একটা বিষয়।
২ নম্বর হচ্ছে, আমরা এই যে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন করছি, আমাদের আন্দোলনের বৈশিষ্ট নিশ্চিতভাবে আপনারা লক্ষ করেছেন, একেবারেই অহিংস আন্দোলন। এবং সম্পূর্ণভাবে একটা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন যেভাবে করতে হয়, সেভাবেই আমরা প্রতিবাদ সমাবেশ করছি। কিন্তু মিছিল করতে গেলেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ আক্রমণ করছে এবং পুলিশ দিয়েও হামলা করাচ্ছে। এর একটা পরিণতি আছে। সে পরিণতিটা হচ্ছে, এখান থেকে যে মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছে, আমাদের লক্ষ্যটা ওই জায়গায়। মানুষকে সম্পৃক্ত করে এর পরে মূল যে আন্দোলনটি হবে, সেটি সরকার পতনের আন্দোলন। এই পতনের লক্ষ্যে আমরা ইতিমধ্যে অনেকগুলো কাজ করেছি। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। আমরা সবাই একমত হয়ে একটা যৌথ ঘোষণার দিকে কাজ করছি। আশা করি খুব শিগগিরই সেটা হয়ে যাবে। এটা হয়ে গেলে আমাদের এ আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্যে যেটা আপনি জিজ্ঞেস করেছেন, শেষ হবে এ সরকার যখন পদত্যাগ করবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে—তখনই হবে এ আন্দোলনের শেষ।
প্রশ্নঃ আলোচনা আছে তারেক রহমানকে দেশে–বিদেশে অনেকে পছন্দ করছেন না।
মির্জা ফখরুল: এগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রচারণা। কিছুটা আন্তর্জাতিক প্রচারণাও এর মধ্যে জড়িত ছিল বলে মনে করি। যে কারণে এ ধরনের প্রচারণাগুলো তারা চালিয়েছে, এখন কিন্তু সে অবস্থায় নেই। এখন দলে, দেশের রাজনীতিতে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তাঁর (তারেক রহমান) গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি।
প্রশ্নঃ অনেকের মতে, বিএনপির ক্ষমতায় আসার পথে তারেক রহমান একটা বাধা। আপনিও কি মনে করেন?
মির্জা ফখরুল: না। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের শক্তিতে। আমরা আগেই বলেছি, যদি জনগণের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারের পতন ঘটাতে পারি, তাহলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর পক্ষে সম্ভব না হলে তাঁর অবর্তমানে তারেক রহমান সাহেব প্রধানমন্ত্রী হবেন।
প্রশ্নঃ ‘হাওয়া ভবনের’ কারণে অনেকে বলছেন তারেক রহমান ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি এখনকার চেয়েও খারাপ হবে।
মির্জা ফখরুল: এ কথার পেছনে কোনো যুক্তি নেই। এর পেছনে অপপ্রচার আছে। যা সেই এক-এগারোর আগে থেকেই শুরু হয়েছে। তখন যেসব বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবী মিলে তুমুল অপপ্রচার চালাচ্ছিলেন, হাওয়া ভবনের নাম করে ও আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে, কিন্তু পরে দেখা গেছে, এগুলোর মধ্যে ৯৯ ভাগই সত্য নয়। এসব অপপ্রচার হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে। বিএনপি এবং এর নেতৃত্বকে জনগণের কাছে হেয়প্রতিপন্ন এবং ভুল ধারণা সৃষ্টি করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মধ্য দিয়ে এসব অপপ্রচার চলছে। বাস্তবতা হচ্ছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চালানো অপপ্রচার আওয়ামী লীগাররা প্রমাণ করতে পারেননি।