নাটোরের সিংড়া উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে আওয়ামী লীগের এক পক্ষের নেতা-কর্মীরা আরেক পক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিংড়ার ইটালি ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের এক পক্ষের অভিযোগ, হামলাকারী ব্যক্তিরা তাঁদের দোকান, বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন।
পাকুড়িয়া গ্রামের অন্তত ১০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত রোববার বিকেলে পাকুড়িয়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিয়োগ করা নিয়ে গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য আলিফ হোসেন এবং সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এর জেরে গতকাল বিকেল চারটার দিকে আলিফ হোসেনের নেতৃত্বে ২৫০ থেকে ৩০০ লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে গ্রামের বাজারে হামলা করেন। এ সময় হামলাকারী ব্যক্তিরা বাজারের অন্তত সাতটি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হামলাকারী ব্যক্তিদের বাধা দিতে গেলে চা-বিক্রেতা রনিকে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে হামলাকারী ব্যক্তিরা বাজারের পাশের বাসিন্দা আইনজীবী মানিক লাল চক্রবর্তীর বাড়িতে হামলা করেন। এ সময় মানিক লালের কার্যালয়ের আসবাব ও নথিপত্র তছনছ করা হয়। এ সময় প্রতিবাদ করলে মানিক লালের ছোট ভাই ও সাবেক ইউপি সদস্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তা লাল চক্রবর্তীকে মারধর করা হয়।
প্রায় দুই ঘণ্টা তাণ্ডব চালানোর পর হামলাকারী ব্যক্তিরা সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গ্রাম ছেড়ে যান। পরে সিংড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্ধ্যার পর নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
মানিক লাল চক্রবর্তী বলেন, আমরা যুগ যুগ ধরে আওয়ামী লীগ করি। গত উপজেলা নির্বাচনে আমরা নৌকার প্রার্থী শফিকুল ইসলামের পক্ষে ছিলাম। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বাদেশ আলীর পক্ষ নেন। এ ছাড়া গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইটালি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেনের পক্ষে ভোট করি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বর্তমান সদস্য আলিফ হোসেন। এসব কারণে ইটালি ইউপির চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম ও তাঁর সমর্থকেরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। তাঁরা যেকোনো বিষয়ে গ্রামে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করতেন।
মানিক লাল অভিযোগ করে বলেন, গতকাল বিকেলে প্রতিপক্ষরা পরিকল্পিতভাবে ক্যাডার ভাড়া করে গ্রামে হামলা চালিয়েছেন। হামলার সময় তিনি ও তাঁর ভাই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল করে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ সময়মতো সাহায্য করেনি বলে তিনি দাবি করেন।
সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রতিপক্ষরা আমার দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। আমি পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছি।
তবে আলিফ হোসেন হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী গতকাল গ্রামে এলে তাঁদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। এর জেরে কিছু ঘটনা ঘটতে পারে, তবে তিনি সেখানে ছিলেন না বলে দাবি করেন।
জানতে চাইলে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯-থেকে কল পাওয়ার পর প্রস্তুতি নিতে আমাদের কিছুটা সময় লেগেছে। কারণ, ঘটনাস্থল এখান থেকে অনেক দূরে। এ ছাড়া আমাদের আন্তরিকতার অভাব ছিল না। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।